গঙ্গাচড়ায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের
- Update Time : ০১:৩৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫ Time View

গঙ্গাচড়া ( রংপুর) প্রতিনিধি :
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান কুঠিপাড়া এলাকায় স্বামীকে হেনস্তা করতেই থানায় নির্যাতন, অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় স্ত্রী একটি এজাহার দাখিল করলে পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সেটিকে মামলা হিসেবে গ্রহন করেছে।
গত ১৮ অক্টোবর পাইকান কুঠিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ নিজ বাড়ি থেকে স্ত্রীর দায়েরকৃত নির্যাতন,অপহরণ ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মামলার বাদী স্মতি খাতুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৯ অক্টোবর ২০২৩ সালে সহকারী কাজী সোলায়মান হোসেনের বাড়িতে রেজিস্ট্রারী বিয়ের উদ্দেশ্যে গেলে মেয়ে নাবালিকা হওয়ায় ৫০০১০৫ টাকা দেন মোহর নির্ধারণ সাপেক্ষে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে । সম্প্রতি আব্দুল কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে রেজিস্ট্রি কাবিনামর জন্য চাপ দিলে আব্দুল কাদের তাঁর প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাভে বিলম্ব হয়। এদিকে স্মৃতির পরিবার বিষয়টি এলাকার মানুষকে জানালে ১১ অক্টোবর সালিসি বৈঠক বসে। বিষয়টি সেদিনও নিষ্পত্তি না হওয়ায় স্মৃতি খাতুন আব্দুল কাদেরের বাড়িতে গেলেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে থানা পুলিশ স্মৃতিকে কাদেরর বাড়ি থেকে নিয়ে আসে এবং অবিভাবকদের নিকট পৌঁছে দেয়।
কিন্তু বিষয়টি ঘিরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই সব সংবাদে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আব্দুল কাদের বিয়ে ছাড়াই দু’বছর ধরে স্মৃতি খাতুনের সাথে অবৈধভাবে বসবাসের ইঙ্গিত দেয়া হয় । পরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এজাহারে উল্লেখিত বাদীর জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর -৪২২৯৫১০২৮৬ সূত্র ধরে নির্বাচন অফিস থেকে জাবেদা অনুলিপি সংগ্রহ করে দেখা গেছে জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা – মো: ছোহরাব আলী, মাতা – মোছা – রওশনারা বেগম এবং স্বামী – মো: আব্দুল কাদের। আবার সরকারী কর্মচারীর চাকুরী সংক্রান্ত তথ্যাদি অনুযায়ী পারিবারিক তথ্যে প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের দুই জন স্ত্রীর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম স্ত্রী মোছা: রীনা আক্তার ফাতেমা যাহার জাতীয় পরিচয় পত্র নং -১৯৮১৮৫১২৭১৬৮৯১৬৩৯ এবং দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা: স্মৃতি খাতুন যাহার জাতীয় পরিচয় পত্র – ৪২২৯৫১০২৮৬ উল্লেখ রয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, থানায় বাদীর টাইপকৃত এজাহারের উল্লেখিত জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর এবং আব্দুল কাদেরের সরকারী কর্মচারীর চাকুরী সংক্রান্ত তথ্যের ( ইএফটি) পারিবারিক তথ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র এক ও অভিন্ন।
আব্দুল কাদেরের প্রথম স্ত্রী মোছা: রীনা আক্তার ফাতেমা বলেন, আমার স্বামী স্মৃতিকে দুই বছর আগো বিয়ে করেছে এবং তাকে বাড়িতে না এনে বাবার বাড়িতে থাকার জন্য আলাদা ঘর নির্মাণ ও প্রায় দুই লক্ষ টাকার প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র কিনে দিয়ে সেখানে রেখে পড়াশুনা করায়।
সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে,পাইকান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের মোছা : স্মৃতি খাতুনকে নাবালিকা হওয়ায় ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে দুই বছর ধরে ঘর সংসার করার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয় পত্রে সেচ্ছায় স্বামী হিসেবে নিজের নাম উল্লেখ করেছেন এবং সরকারী কর্মচারীর তথ্যে (ইএফটি) ও দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাহলে অপহরণ এবং ধর্ষণের মতো অভিযোগ কতটুকু যৌক্তিক? এমন প্রশ্নই এখন সবার মনে।
এ বিষয়ে সহকারী কাজী সোলায়মানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা আমার কাছে এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে কোথায় বিয়ে করেছে আমার জানা নাই।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল ওহাব বলেন, সহকারী কাজী সোলায়মানের কাছে বিবাহ রেজিস্ট্রারের যে বই দেয়া ছিল সেখানে আব্দুল কাদের ও স্মৃতি খাতুনের বিবাহের কোন প্রমাণ পাই নাই।
গঙ্গাচড়া মডেল থানা (ভারপ্রাপ্ত) অফিসার ইনচার্জ ও ওসি তদন্তকে একাধিকবার মুটো ফোনে চেষ্টার পর না পাওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ মো: ফারুকুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মামলা দায়ের হতে পারে তবে পুলিশের তদন্তে প্রকৃত সত্য উঠে আসবে।













